গভীর রাতে চার উপদেষ্টা হাজির হয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ার পর পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহতরা সড়ক ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে গেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই সঞ্জীব কুমার সরকার।
এদিন সকালে আন্দোলনকারীদের একজন সালমান বলেন, চার উপদেষ্টা এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সচিবালয়ে বৈঠক করার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা সড়ক ছেড়ে ফিরে যাচ্ছি।
রাতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম পঙ্গু হাসপাতালের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমানও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আন্দোলনকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগামীকাল (আজ) সচিবালয়ে বসে আপনাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতো সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যেসব মন্ত্রণালয় আছে, (সাথে) জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং আমাদের সরকারের দফতর থেকে যারা শহীদ ও আহতদের অর্থ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে আছেন, সবাই মিলে আমরা বসব আপনাদের সাথে।
তিনি আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের একটি রূপরেখা তৈরি করে তা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমানকে আন্দোলনকারীদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের ঘাটতি রয়েছে। আমরা আমাদের ব্যর্থতা থেকে শেখার চেষ্টা করছি, আর তার প্রমাণ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উনার মতো একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে বসিয়েছি।
তিনি আন্দোলনকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আহতদের পুনর্বাসনে সরকারের ঘাটতি মোকাবিলায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
এদিকে, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাখেন কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহতরা।
তারা দাবী করেন, সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে, দ্বিতীয় দফায় উপস্থিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আন্দোলনকারীদের জানান, উপদেষ্টা আসিফ ও নাহিদ এই মুহূর্তে ঢাকায় নেই। সবার সঙ্গে বসতে হলে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার আগে এটি সম্ভব নয়।
তবে, আন্দোলনকারীরা সড়ক ছাড়েননি এবং রাত ৩টার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ও যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতদের ‘দেখতে না যাওয়ায়’ তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়েন। আন্দোলনকারীরা তার গাড়ি আটকে দেন। কিছু সময় পর, উপদেষ্টা হাসপাতাল ত্যাগ করলে বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর, তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেন। রাস্তার উপর হুইল চেয়ারে ও ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
পরে, রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, তবে তারা তার কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে চাননি।
এর আগে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’-এর প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীরা তার কথা শেষ করতে না দিয়েই বারবার তাকে থামিয়ে দেন।

পঙ্গু হাসপাতাল
১৫ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়েন আন্দোলনে আহতরা
- আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৬:৫৪:১৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৬:৫৪:১৬ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ